শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: যেসব নারী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন তাদের সবার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
অবশ্য তার এ হুমকির জবাবে মুখ খুলেছেন অভিযোগকারী কিছু নারী। তারাও দমে যাওয়ার পাত্রী নন। ট্রাম্পের হুমকির জবাব দিয়েছেন আরও জোরালোভাবে।
পেনসিলভ্যানিয়ায় গেটিসবার্গে প্রথম ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করার সময় তিনি বলেছেন, আমার প্রচারণাকে বিঘ্নিত করতে বা প্রচারণায় আঘাত হানতে এমন অভিযোগকারী প্রতিটি নারী মিথ্যা বলেছে।
তাদের অভিযোগ পুরোপুরি বানানো। তারা যে অভিযোগ এনেছে তা কখনো ঘটেনি। কক্ষণও না। নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার পর এসব মিথ্যাবাদীর সবার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। ট্রাম্প আরও অভিযোগ করেন বড় বড় সব সংবাদ মাধ্যমের সাধারণ একটি ফোন কলের মাধ্যমে তাদের সব কথা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, কার্যত যার কোনো বাস্তবতা নেই।
এতে অভিযোগকারী নারীরা বলেছেন, যদি ট্রাম্প অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন তাহলে শুধু ট্রাম্প একা নন, তার সঙ্গে থাকা সবার বিরুদ্ধে মামলা করার শক্তি আমাদের আছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির শিকার জিল হার্থ অন্যতম। তার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন লিসা ব্লুম।
তিনি অভিযোগ করেছেন, ১৯৯০ এর দশকের শুরুতে দুটি আলাদা ঘটনায় জিলের দিকে অপ্রত্যাশিত যৌন সুবিধা নিতে চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প। তিনি ট্রাম্পের সর্বশেষ মন্তব্যের জবাবে টুইটারে শনিবার বিকালে লিখেছেন, যদি ট্রাম্প অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন, তাহলে শুধু ট্রাম্প নন, তার সহযোগীদের বিরুদ্ধেও আদালতে যাওয়ার শক্তি আছে তাদের। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন ক্যাথি হেলার।
গত ৭ই অক্টোবর ২০০৫ সালের একটি রগরগে অডিও-ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পর এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১১ জন নারী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন।
ওই টেপে তিনি নিজে স্বীকার করেছেন, বিবাহিত এক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তিনি বেপরোয়াভাবে চেষ্টা করেছিলেন। তিনি সুন্দরীদের দেখলে অপেক্ষা করতে পারেন না। তাদেরকে ধরে চুমু দিতে থাকেন। তাছাড়া কেউ একবার তারকা হয়ে গেলে নারীদের সঙ্গে যা খুশি তাই করতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অন্য একটি টেপে তিনি হলিউড কাঁপানো অভিনেত্রী লিন্ডসে লোহানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, লিন্ডসে লোহান বিছানায় খুব উপভোগ্য হবে। এ ছাড়া ডনাল্ড ট্রাম্প নিজের মেয়ের শারীরিক গঠন নিয়ে মন্তব্য করতে ছাড়েন নি। তার মেয়ে ইভানকা স্তন স্ফীতকরণ করান নি বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
বলেছেন, সে খুব সুন্দরী, আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। যেসব নারী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন তাদেরকে মিথ্যাবাদী বললেও টেপের কথাগুলোর বিষয়ে ক্ষমা চেয়েছেন ট্রাম্প। এ বিষয়ে তিনি সামনে ঠেলে দিয়েছেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পকে।
মেলানিয়া বলেছেন, তিনি ট্রাম্পকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। মার্কিনিদেরও তাই করা উচিত। তবে ট্রাম্প যেসব কথা বলেছেন তা অগ্রহণযোগ্য। অসংযত। তবে অভিযোগকারী বা সত্য তুলে ধরা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলার ভয় দেখানো ট্রাম্পের জন্য নতুন কিছু নয়।
এ মাসের শুরুতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। তাদের অপরাধ তারা তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। মামলার হুমকি দেয়ার দু’সপ্তাহ পরে তিনি মামলা করা থেকে পিছিয়ে যান। ২২শে আগস্ট শনিবার তিনি যৌন হয়রানির অভিযোগ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য দায়ী করেন প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন শিবিরকে।
বলেছেন, এসব নারীকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করিয়েছে হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা শিবির। ট্রাম্প বলেন, এসব করেছে সম্ভবত ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি ও হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা শিবির। তারাই বানোয়াট গল্প নিয়ে এসব নারীকে সামনে এগিয়ে দিয়েছে। ট্রাম্পের এ অভিযোগের বিষয়ে হিলারি ক্লিনটনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। শনিবার রাতে তিনি বলেছেন, ট্রাম্প যে কথা বলেছেন তার কোনো সত্যতা নেই।
গত সপ্তাহে তিনি বলেছেন, ২০ বছর আগে তার অনুমতি না নিয়ে তাকে চুমু দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মামলার হুমকি দেয়ার পর তিনি সিএনএনকে বলেছেন, আমি মনে করি এ হুমকি অন্যদের (নির্যাতিত নারীদের) বিরত রাখতে পারবে না। আরও অনেক নারী তাদের গোপন কথাগুলো খুলে বরে দেবেন। অনুমতি ছাড়া ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চুমু খাওয়ার আরও অভিযোগ করেছেন টেম্পল তাগার্ট।
তিনি সিএনএনকে বলেছেন, ট্রাম্পের মামলার হুমকিতে তিনি মোটেও বিস্মিত নন। তাগার্ট বলেছেন, ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে পরিষ্কার অভিযোগগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত করতে, সত্য মেনে নিতে, অভিযোগকারীদের কণ্ঠ রোধ করতে মমলার হুমকি দিতেই পারেন। এটা তার একটি হতাশাজনক কর্মকাণ্ড। ডনাল্ড ট্রাম্পের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার তিন নারীর প্রতিনিধিত্ব করছেন মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী গ্লোরিয়া অলরেড।
তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের ওই হুমকি অন্য নারীদের অভিযোগ প্রকাশ করে দিতে বিরত রাখতে পারবে না। শনিবার লস অ্যানজেলেসে এক সংবাদ সম্মেলনে গ্লোরিয়া অলরেড বলেন, যদি ট্রাম্প মনে করে থাকেন হুমকি দেয়ার কৌশলের মাধ্যমে তিনি অভিযোগকারী নারী ও যারা সামনের দিনগুলোতের তাদের কথাগুলো বলতে চান তাদেরকে থামাতে পারবেন তাহলে পুরোপুরিই হতাশ হতে হবে তাকে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিতে, ভয়ভীতিতে নারীদের কণ্ঠ কখনো স্তব্ধ হবে না।